একজন মানুষ নতুন তথ্য এবং বিষয় কীভাবে শিখছে, ইউনিক হওয়ার জন্য অনেক কিছুর মধ্যে এটাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেউ একটা কাজ নিজে করে শেখে, কেউ শেখে আরেকজন সেটা কীভাবে করছে তা দেখে, কেউবা আবার কাজটি কীভাবে করা হল সেই ব্যাখ্যা শুনে শেখে। যে উপায়ে কেউ শিখতে পছন্দ করে সেটাই হল তার ব্যক্তিগত ইউনিক স্টাইল। নিজের এই শেখার স্টাইল আবিষ্কার করতে পারলে শিক্ষক এবং অভিভাবক উভয়ের কাছ থেকেই মনের মতো করে নির্দেশনা আদায় করে নেয়া যায়।
আমাদের শুরুর কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই লার্নিং স্টাইল মোটামুটিভাবে তিনটি প্রধান ক্যাটাগরির।
১। অডিটরি বা শ্রবণ-কৌশল
২। ভিজ্যুয়াল বা দর্শন-কৌশল
এবং
৩। ট্যাক্টাইল বা ব্যবহারিক কৌশল
আর, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আশপাশের পরিবেশ, যা শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।
অডিটরি বা শ্রবণ-কৌশল:
অডিটরি শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ জ্ঞান অর্জন করে শুনে শুনে। শেখার বিষয়বস্তু কানে পৌঁছালে তবেই তারা ভালো আয়ত্ত্ব করতে পারে। বই থেকে দেখে কিছু পড়লে তারা উচ্চ শব্দে পড়ে। পড়ার পর ‘কী পড়লাম’ তার একটা সারমর্ম বক্তব্য আকারে দিতে পারলে সেটা কার্যকর হয় তাদের জন্য। কেননা- উচ্চ স্বরে সারমর্ম বলার সময় তারা তথ্যগুলো আবার শোনার সুযোগ পায়। আবার, যে শেখায় তার জন্যও এতে সুবিধা। শেখা বিষয়টির কোথায় কতটুকু বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে সেটা ভালো করে বোঝার সুযোগ পান শিক্ষক। এরকম শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভিডিও বা অডিও ক্লিপসগুলো খুব কাজে আসে। শিক্ষার্থী চাইলে পড়ার সময় নিজেই টেপ রেকর্ডার চালু করে দিতে পারে, যাতে পরবর্তীতে পড়ার সুবিধা হয়।
ভিজ্যুয়াল বা দর্শন-কৌশল:
এই ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা দেখে দেখে শিখতে পছন্দ করে। তারা কাগজে মানচিত্র, ডায়াগ্রাম, এমনকি নিজেদের আইডিয়াগুলো পর্যন্ত আঁকে। কখনো কখনো চিত্রে রঙও ব্যবহার করে অধিক পরিস্ফুটনের জন্য। কোন কিছু শিখেই তারা সেটার একটা ভিজ্যুয়াল রূপ দেয় বা মনে মনে নানান ছবি কল্পনা করে। তারা মোটামুটি নির্জনে পড়াশোনা করতে পছন্দ করে। এই ধরণের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিডিও ক্লিপ দেখে শেখাটা দারুণ কাজে দেয়।
ট্যাক্টাইল বা ব্যবহারিক কৌশল:
এই ধরণের শিক্ষার্থীরা শুনে বা আত্মস্থ করে শেখার চেয়ে হাতে-কলমে শিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হাজার বার শুনে বা পড়েও যেটা তাদের কাছে খুব কঠিন লাগে, একবার প্রাকটিস করেই সেটা তারা আয়ত্ত্ব করতে পারে। এই ক্যাটাগরির একটা মানুষকে একটা ফোন নম্বর যতবারই শোনানো হোক না কেন, বেশিরভাগ সময়ই সেটা সে মুখস্থ করতে পারবে না। কিন্তু একবার ফোন ব্যবহার করলেই সেই নম্বর তার মনে গেঁথে যাবে। বই পাশে সরিয়ে রেখে তারা শেখা বিষয়টা বিভিন্নভাবে এ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করে, আবার এ্যাপ্লাই করতে করতেই তারা শেখে।
পরিবেশ দ্বারা কখনো কখনো শিক্ষা-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হলেও প্রতিটি মানুষের নিজস্ব স্টাইল থাকে পড়ার। তুমি এর মধ্যে কোনটি? সেটা যদি বুঝে নিতে পার, আর প্রতিটি বিষয়ের জন্যই যদি সেই স্টাইল মেনে কোন না কোন উপায় বের করে নিতে পার, পড়া মনে রাখা তোমার জন্য হবে জলবৎ তরলং। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বন্ধুদের আড্ডায়, সভা-সেমিনারে, যেখানেই তুমি যাও, নিজের দিকে লক্ষ্য রাখো, কোন প্রক্রিয়ায় তুমি তথ্য ভালোভাবে নিজের মধ্যে নিয়ে নিতে পারছ।