“ এডমিশনে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়েও মনোযোগ দিতে হয়"

লেখক: অপরিচিত | সঙ্কলনের দিন: মে 24, 2018

 ক্যাডেট কলেজের স্টুডেন্টদের নিয়ে একটি রিউমার আছে যে ক্যাডেটের স্টুডেন্টরা অনেকটা দলছুট। ক্যাডেটের বাইরে নন ক্যাডেটদের সাথে মিশতে, খাপ খাইয়ে নিতে ওদের সমস্যা হয়। ক্যাডেট কলেজের স্টুডেন্ট হিসেবে তুমি কী বলবে?

ইউসুফ: আমার কাছে মনে হয় এইটা ঠিক না। ক্যাডেটের স্টুডেন্টরা আরো বেশিই অন্যদের সাথে মিশতে পারে। কিছুদিন আগে আমার এক নন ক্যাডেট ফ্রেন্ড আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তখন ও এসে বললো যে ‘তোমাদের ক্যাডেটের স্টুডেন্টরা খুব ফ্রেন্ডলি, আমি ভেবেছিলাম ওখানে বোধ হয় আলাদা গ্রুপিং ই হয়ে যাবে’। এটার শোনার পর আমি আরো শিউর হই যে ধারণাটা ভুল। এর আগে আমিও ভাবতাম সবাই যখন বলে তখন কিছু একটা তো নিশ্চয়ই আছে।

তুমি যেহেতু ক্যাডেটে পড়েছো, ক্যাডেটের পড়ালেখা-শৃঙ্খলা নিয়ে আলাদা সুনাম আছে। ইন্টারমিডিয়েটের ভালো প্রস্তুতির পরও এডমিশনের জন্য কোচিং গাইডেন্সের দরকার কতটুকু?

ইউসুফ: আসলে আমরা কলেজে পড়ি এইচএসসি’র জন্য। কলেজের আর এডমিশনের প্যাটার্ন একেবারেই আলাদা। কলেজের পড়া অনেকটাই থিওরেটিক্যাল, আর এডমিশনের পড়া আরো ভাস্ট এবং অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়েও মনযোগ দিতে হয়। এই পড়া গুলো কলেজে থাকতে হয় না। দিক নির্দেশনার জন্য আমার মনে হয় কোচিং দরকার। বিশেষ করে মডেল টেস্টগুলো বেশী ইম্পোর্ট্যান্ট। মডেল টেস্টের কারণে অন্যদের থেকে নিজের পিছিয়ে পড়াটা চোখে পরে, একটা ইভালুয়েশন হয়। আর মডেল টেস্টগুলাতো এডমিশন টেস্টের মতই, টেস্ট দিতে থাকলে প্রিপারেশনটা রিভাইজ হয়।

ক্যাডেট কলেজগুলো একজন মানুষকে আপাদমস্তক গড়ে দেয়। তুমি যেহেতু ক্যাডেটে পড়েছো, তোমার কাছে তোমার কোন অভ্যাসের কথা মনে পড়ে যেটা ভালো রেজাল্টের জন্য তোমাকে প্রস্তুত করেছে?

ইউসুফ: ক্যাডেট কলেজ তো একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে মেইন কথা হলো অনেক প্রেশার নিতে হয়। সারা দিনই রুটিন মেইন্টেইন করতে হয়; সব সময় কোন না কোন একটিভিটির ভেতর থাকা লাগে, টাইট শিডিউল। দিন শেষে যখন রাতে ঘুমাতে যেতাম নিজের কাছে অবাক লাগতো দিন কীভাবে শেষ হয়ে গেলো! তো আমার কাছে মনে হয় নিজেকে প্রেশার দেয়া এবং হ্যান্ডেল করার ব্যাপারটা ক্যাডেট কলেজ থেকে পেয়েছি।

এসএসসি’র তুলনায়, এইচএসসি’র সিলেবাস অনেক বড়; ইন্টারমিডিয়েটের দুইবছরই নিয়মিত পড়াশুনা করতে হয়। আবার এডমিশন টেস্টের সময় আরো বিস্তৃত পড়ালেখা। লম্বা সময় ধরে নিয়মিত মনযোগ ধরে রাখা এবং হার্ড ওয়ার্ক কী ধরে রাখা কঠিন না? তোমার কি মনে হয়?

ইউসুফ: হ্যাঁ, এতদিন ধরে মনযোগ ধরে রাখা আসলেই টাফ। মাঝে মধ্যে মনে হইতো এত পড়ে কি হবে! আর তো সম্ভব হচ্ছে না। তখন আবার মনে হতো এখন যদি একটু কষ্ট না করি পরে আমার আফসোস করতে হবে। এইভাবেই মনযোগটা ধরে রাখতাম। আরেকটা কাজ করতাম, ফ্রেন্ডরা কে কী পড়ছে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম; কনফিউশন থাকলে কথা বলে নিতাম। মডেল টেস্টগুলার সময়ও দেখা হতো। এভাবে কো অপারেট করে পড়লে পড়তে বিরক্ত লাগতো না।

মডেল টেস্টের রেজাল্ট খারাপ হলে বা আশানুরূপ না হলে তখন নিজেকে ইন্সপায়ার করতে কীভাবে? বা পরবর্তী পরীক্ষায় কীভাবে ফোকাস করতে?

ইউসুফ: আমি যখন মডেল টেস্টগুলা দিতে শুরু করলাম আমার মনে আছে আমার প্রথম পরীক্ষাটা খারাপ হয়েছিলো; ফিফটি পার্সেন্ট নাম্বার পেয়েছিলাম। প্রথম ক্লাসগুলোতে মনে হতো সবাই আমার চেয়ে বেশি পারে। এর পর কয়েকটা টেস্টের পর সিক্সটি পার্সেন্ট, সিক্সটি ফাইভ, সেভেন্টি পেতে শুরু করলাম। ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে নাম্বার বাড়তে থাকে। চেষ্টা করলে এবং ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে ভলো রেজাল্ট আসে। কোচিং এ শেষের দিকে সময় কম থাকায় চ্যাপ্টার গুলো অনেক দ্রুত শেষ করে মডেল টেস্ট নেয়া শুরু করে। তখন ঐ মডেল টেস্টগুলা খারাপ হয়। তখন কোচিং বন্ধ থাকার সময় বাসায় একটানা পড়ে ওগুলা কভার দিতাম। এভাবে আস্তে আস্তে নাম্বার ভালো করছিলাম।

তোমার একটা ইন্টারভিউতে তুমি বলেছো, তোমার ইচ্ছা ছিল সামরিক বাহিনীতে যাবার। তুমি আইএসএসবি থেকে বাদ পড়ো এবং তুমি মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ো। এখন তোমার মনে হয় তোমার রিজেক্ট হবার অভিজ্ঞতা তোমার উপকারই করেছিল?

ইউসুফ: হ্যাঁ। আমার ছোটবেলার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবার, ক্যাডেট কলেজে যাবার পর পরিবেশের কারণে ডিফেন্সই ভালো লাগতো; তখন মনে হয়েছিলো আর্মিতেই যাই। যখন আইএসএসবি থেকে রিজেক্ট হলাম তখন মনে হলো আগের ইচ্ছাটাই আমার আসল ইচ্ছা, এবং এই রাস্তাটাই এখন খোলা আছে। আমি এইদিকেই সিরিয়াস ভাবে চেষ্টা করি। আমার ব্যাচের ৪৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ জন আর্মি, এয়ারফোর্সে চলে যায়। আমরা যে কয়জন ছিলাম নিজেদের মনে হতো অপদার্থ। তখন ঐ রিজেকশনটা আরো সিরিয়াস হতে অনেকটাই কাজ করছে।

তুমি বলছিলে কোচিং এ শুরুর দিকে অনেকেই রেসপন্সিভ হয়। যেটা দেখে তুমি ঘাবড়ে গিয়েছিলা যে আমি তো এত পারি না; এই অভিজ্ঞতা বেশীরভাগেরই হয় যে সবাই আসলে কাছাকাছিই জানি, তবু আমরা ঘাবড়ে যাই...

ইউসুফ: হ্যাঁ, এরকমই হয়। ব্যতিক্রম দু’একজন ছাড়া সবারই মনে হয় যে আমার চেয়ে আশে পাশের সবাই বেশী ভালো পারে, সবাই ভয় পাই। সবার ভেতরেই ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। কিন্তু চেষ্টাটা কন্সিস্টেন্সলি হলে তখন বোঝা যায় বা নিজের কনফিডেন্স ফিরে আসে। চেষ্টা না করলে তার আগ পর্যন্ত মনে হতে থাকে এরা আমার চাইতে ভালো।

ইন্টারমিডিয়েট পড়ালেখা আর এডমিশন প্রিপারেশন; এই দুয়ের প্রিপারেশনের মধ্যে আলাদা কোথায়?

ইউসুফ: প্রিপারেশনই আলাদা। এডমিশনে অনেক অনেক বেশী ইফোর্ট দিতে হয়। ইন্টারমিডিয়েটে যেমন আমার টার্গেট ছিল সবগুলাতে ৮৫ এর উপরে রাখবো। সেখানে এডমিশনের বেলায় প্রশ্ন ইজি হলে ৯৫ পেয়েও হয়তো আমি ঢাকায় চান্স পাবো না, আবার হার্ড হলে ৮৫ পেয়েও চান্স পেতে পারি। ইন্টারমিডিয়েট অনেকটা সার্টেইন, আর এডমিশন অনেকটা লাকের উপরও ডিপেন্ড করে। তবে যাই করি, লেগে থাকলে চেষ্টার ফল পাওয়া যায়।

এডমিশনের সময় মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পড়া ভাইয়াদের ক্লাসে টিচার হিসেবে পাওয়া -বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে কি? তোমার কি মনে হয়?

ইউসুফ: হ্যাঁ, অনেকটাই। কোচিং এ একটা ভাইয়াকে দেখে ইন্সপায়ার হয়েছি। আবার আমার ক্যাডেটে আমার তিন ব্যাচ সিনিয়র এক ভাইয়া আছেন ওনাকে দেখে আমি অনুপ্রেরণা পেতাম। উনি ক্যাডেটে থাকাকালীন আদারস একটিভিটি একটু এভয়েড করে ঐ সময়টা পড়ায় দিতেন। ডিএমসিতেও এখন উনি প্রতিটা প্রফে ফার্স্ট হয়েছেন। আমার মনে হয় আমি ওনার সমান হইতে চাইলে আরো অনেক অনেক ইফোর্ট আমাকে দিতে হবে।

যাই হোক, আমার কাছে মনে হয় কোচিং সেন্টারগুলো সাপোর্ট দেয়, ওয়ে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু গাইডেন্স নিয়ে ঐ দেখানো পথে চলা এবং হার্ড ওয়ার্ক করাটা আমাদের কাজ। আমাদের উপরেই নির্ভর করে এই পথ দিয়ে আমরা কোথায় যাবো।


< সকল পোষ্টে ফিরে চলুন